বিল্লাল হোসেন প্রান্ত ॥
কাঁদছে ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহের আকাশে আজ কালো মেঘের ছায়া। সবাইকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ময়মনসিংহ রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর মতিমালা। ময়মনসিংহ রাজনীতির প্রিন্সিপাল স্যার মতিউর রহমান।
সাবেক ধর্মমন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (৮১)
মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। রবিবার (২৭ আগষ্ট ) রাত সাড়ে নয়টায় মতিউর রহমানের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১ টায় তার মৃত্যু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লো অসংখ্য নেতা-কর্মী ও সাধারন জনগণ হাসপাতালে ভিড় জমান। সৃষ্টি হয় এক শোকাবহ অবস্থার।
১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মতিউর রহমান। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত হয়। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দুই বারের সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর একুশে পদক পান অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। জনগন তাকে দিয়েছে আন্তরিক খেতাব। মাটি ও মানুষের নেতা। ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের নেতা তিনি।
আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের অবিচল অনুসারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ডাকতেন ‘মতিমালা’। গণতন্ত্রের মানসকন্যা,রাষ্ট্রনায়ক, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একজন সক্রিয় পরীক্ষিত সৈনিক ছিলেন মতিউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় নিবেদিতপ্রাণ দক্ষ সংগঠক। আন্দোলন সংগ্রামে ময়মনসিংহের রাজপথের লড়াকু সিপাহশালার হয়ে কাজ করেছেন আমৃত্যু। জনগনের সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনায় তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন আপনজন হয়ে। রজনৈতিক সততা,ত্যাগ তিতীক্ষার অগ্নি পরীক্ষায় বার বার উত্তীর্ণ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই জননেতা প্রস্থানে শোকাহত সব শ্রেণী পেশার মানুষ। নিস্বার্থ জননেতার প্রতিকৃতি যাকে করেছিলো ময়মনসিংহের রাজনীতির প্রিন্সিপাল।
আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
সারাদেশের তুলনায় ময়মনসিংহে রাজনৈতিক শান্তিপূর্ন আবহ ধরে রাখতে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের প্রগতিশীল ও ইতিবাচক রাজনীতি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আপোষহীন নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহের মানুষের বিপুল আস্থা ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয়েছেন। সে সময়ই তৎকালীন জান্তা শাসনের রক্তচক্ষু ও লোভলালসা উপেক্ষা করে তিনি আদর্শের পতাকা তুলে ধরেন। জনগনের প্রত্যাশা আশা আকাঙ্খা সেদিন মূর্ত হয়ে উঠেছিলো এই নেতার চারিত্র্যে।
রাজনৈতিক জীবনের উষালগ্নে এক অগ্নিযুগের সংগ্রামী হিসেবেও তিনি নেতৃত্বে অগ্রনী ভূমিকা রেখে গেছেন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহের অধ্যায়ে তার নাম লেখা থাকবে স্বার্ণাক্ষরে। ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে মুক্তিযোদ্ধা জনতার যে র্যালী হয় তার অন্যতম নেতৃত্বদানকারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় ইতিহাসের মহানায়ক। ময়মনসিংহে আওয়ামী রাজনীতির প্রাণ পুরুষ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতা।
১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দেশের জটিল রাজনীতিতে অনেক প্রতিকুলতার সুত্রপাত ঘটে। যা জিয়া থেকে শুরু করে এরশাদ পর্যন্ত প্রলম্বিত। এ সময়ে কারাবরণ, অনেক হুমকি আর মন্ত্রীত্বের প্রলোভন উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি ধরে রাখার ইতিহাস আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমানেরই রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ও জীবনের অধ্যায় ছিলো। রাজনৈতিক জীবনে ঘাত প্রতিঘাতের মূর্ত প্রতীক এই নেতা ময়মনসিংহের ৪ সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা মিথ্যামামলার আসামী হয়ে পুত্র মোহিত উর রহমান শান্ত সহ কারান্তরীন ছিলেন বিএনপি জামাত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে। সহ্য করেছেন অসহনীয় নির্যাতন। একাধারে ২৩ মাস আটক রেখে নির্যাতন চালিয়েছিলো তার উপর। ১/১১ পরবর্তী সময়ে সংস্কার পন্থীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের পক্ষে আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমানই সর্বপ্রথম গর্জে উঠে ছিলেন। বলেছিলেন নেত্রীকে মাইনাস করে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি নয়। কেউ যদি করেন তবে ময়মনসিংহে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিলাম। মতিউর রহমান বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জননেত্রীর নেতৃত্ব আর আওয়ামী লীগের জন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তী। ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা।